শাহজাহান গড়েছেন তাজমহল, চাষী কাদির গড়েছেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ – demo-3

শাহজাহান গড়েছেন তাজমহল, চাষী কাদির গড়েছেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ১২, ২০২০

‘কিশোর বয়সে এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলাম। সেই প্রেমের সেতু বন্ধন রচিত হয়েছিল চিঠির মাধ্যমে। প্রেমিকা আমাকে যখন চিঠি লিখতো, তখন চিঠির ৪ কোণে ৪টি এবং মাঝখানে ১টি বড় লাভ চিহ্ন এঁকে দিতো। লাভ চিহ্নের ভেতরে লেখা থাকতো প্রেমিকার ও আমার নাম। কিশোর বয়সের সেই লাভ চিহ্নকে ফসলের জমিতে ফুঁটিয়ে তুলে ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখালাম। আমার প্রেমিকার নাম মকসুদা বেগম। ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছি। মাকসুদা আমার কাছে মমতাজের মত। সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ পৃথিবী বিখ্যাত সুরম্য তাজমহল তৈরী করেছিলেন। আমি গরীব, আমার সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। তাই তাজমহল বানাতে না পারলেও জমিতে সেই ‘লাভ’ চিহ্নের নকশা এঁকে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে প্রেয়সীকে লেখা চিঠির মতোই নিজের জমিতে প্রেমপত্র এঁকেছি’, বললেন কৃষক আব্দুল কাদির।

আব্দুল কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়াখলাবলা গ্রামে। তার বাবার নাম হাজী তারা মিয়া।শৈল্পিক বুননে ৩৫ শতক ফসলের জমিকে সাজিয়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন রুপে।শত-শত মানুষ কৃষক কাদিরের ক্ষেত দেখতে ভিড় করছেন প্রতিদিন।

পাড়াখলাবলা গ্রামে একটি ’বন্ধুমহল’ ডিজিটাল ক্লাব আছে। আব্দুল কাদির সেই ক্লাবের উপদেষ্টা সদস্য। ক্লাবের সদস্যরা নতুন ও ডিজিটাল পদ্ধতির কিছু করার আবদার করে তার কাছে।এ আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় জমির বুকে চিত্রাংকন করেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। ফসলের এই কারুকার্যময় চিত্ররূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ ক্ষেতের পাশে ভিড় করছেন।

‘নকশী কাঁথার মাঠ’র দুপাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে চারটি লাভ চিহ্ন এবং ক্ষেতের মধ্যখানে একটি বড় ‘লাভ ’চিহ্ন। বড় ‘লাভ’ চিহ্নের ভেতরে রয়েছে আব্দুল কাদিরের নাম। জমিতে নান্দনিক ছবি আঁকার পেছনের কারণ হিসেবে কাদির গণমাধ্যমকে জানালেন, ‘নৌকা আমি ভালোবাসি। নৌকা হলো আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও গণমানুষের প্রতীক। শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। ফুলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই শাপলা আঁকা।’

এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, কৃষক আবদুল কাদির মানসিক ভাবনার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন নিজের ফসলের মাঠে। তার ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।’ সুত্রঃ ইত্তেফাক